অপর গুনাহগার মুসলিমের প্রতি একজন মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি Leave a comment

ইবনে কাইয়্যিম বলেছেন, যদি কোন মুসলমান তার আরেক মুসলমান ভাইকে তার কোন গুনাহের জন্য অপমানিত বা লজ্জিত করে তাহলে মৃত্যুর আগে সেই মুসলমান ওই একই গুনাহ দ্বারা পরিক্ষীত হবে।

কাজেই আমাদের উচিত হবে যদি আমরা আমাদের ভাইয়ের কোন গুনাহ দেখে ফেলি বা শুনে ফেলি, তাহলে তাকে অপমান না করে তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা, “হে আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন এবং তাদেরকে মাফ করুন।” বিখ্যাত সাহাবী ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, “আল্লাহর কসম, আমার ভয় হয় যদি, কোনো মহিলা অপকর্মের কারণে গর্ভবতী হয়ে যায়, এবং এজন‍্য আমি তাকে অপমান করি, তাহলে হয়তো আমিও সেই একই গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাব।” 
এজন্য বসে বসে অন্য মুসলমান ভাইয়ের দোষ খোঁজা এবং তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করা অথবা তাদের কোন গুনাহকে অপরের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। সবার আগে নিজেকে ঠিক করতে হবে। নিজের দুর্বলতা গুলোকে দূর করতে হবে। নিজের উন্নতি সাধনে চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন, আল্লাহ তাআলা আরেকজনের গুনাহের জন্য আপনাকে পাকড়াও করবেন না। বরং শুধু আপনার নিজের গুনাহের জন্যই পাকড়াও করবেন।
আরেকজনকে ছোট করে দেখবেন না যেহেতু তার ছেলে বা তাদের সন্তান নামাজ পড়ে না। অন‍্য বোনদেরকে কখনোই অপমানিত করবেন না যেহেতু তাদের মেয়েটা হিজাব করে না। কারণ আপনি জানেন না সেই ছেলেকে নামাজ পড়ানোর জন্য এবং সেই মেয়েকে হিজাব করানোর জন্য তাদের বাবা-মা কতই না কষ্ট করে যাচ্ছেন। হয়তো তারা প্রতিনিয়ত আফসোসের আগুনে পুড়ে মরছেন। হয়তো একারণে সবকিছু থেকেও তাদের মনে কোনো শান্তি নেই।
আমরা সবাই জানি যে, নুহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র সন্তান জাহান্নামী, হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিতা ও জাহান্নামী। কাজেই আসুন আমরা আরেকজনের পরিণতি কি হবে, আরেকজনের নিয়তের ব্যাখ্যা বা অর্থ কি, না খুঁজে নিজেদের দিকে দৃষ্টিপাত করি। নিজেদের এবং আমার অধীনস্ত যারা আছে অর্থাৎ যাদের প্রতি আমি দায়িত্বশীল তাদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করি। হয়তো আজ আপনি আমি অনেক নেক কাজ করছি কিন্তু আল্লাহ না করুক এমন হতে পারে যে আগামীতে মৃত্যুর আগে গুনাহে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)।
মনে রাখবেন মানুষের হৃদয় মহান আল্লাহতায়ালার দুই আঙ্গুলের মাঝখানে এবং তিনি যাকে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা তা ঘুরিয়ে দেন। ঠিক যেমন গরম পানি ক্রমাগত ফুটতে থাকে, মানুষের অন্তর ও সেভাবে পরিবর্তন হতে থাকে। অর্থাৎ আজ আমরা হেদায়েতের পথে নিজের যোগ্যতায় নয়, বরং মহান আল্লাহ তাআলার অপার রহমতের ফলেই আছি। তাই যখন আমরা অন্য কাউকে কোন গুনাহ বা তার মধ্যে খারাপ কিছু দেখব তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করব,
“সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাকে এই কষ্ট হতে দূরে রেখেছেন এবং তার সৃষ্টিকুলের অনেকের ওপর এই মর্যাদা দান করেছেন”

“হে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুন এবং আমাদেরকে হেদায়েতের পথে অবিচল রাখুন।”

এছাড়াও আরেকটি দোয়া আমাদের বেশি বেশি করা উচিত।

“হে অন্তর সমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে সঠিক পথে অবিচল রাখুন।”

হযরত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একটা বিখ্যাত ঘটনা আছে। হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন মদ্যপায়ী প্রতিবেশী ছিল। তিনি অনেকবার তার এই মদ্যপায়ী প্রতিবেশীকে নসিহত করেছেন মদ ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছিল না। তাই একদিন তিনি হতাশ হয়ে তাকে নসিহত করা ছেড়ে দিলেন।
এর বেশ কিছুদিন পর, হঠাৎ হযরত আবু হানিফা তার দরজায় খুব জোরে জোরে করাঘাত শুনতে পেলেন। দরজা খুলে দেখলেন সেই মদ্যপায়ী প্রতিবেশীর স্ত্রী। তিনি জানতে পারলেন সেই মদ্যপায়ী ব্যক্তিটি মারা গেছে। স্ত্রী এসেছে ইমাম আবু হানিফাকে সেই ব্যক্তির জানাযা পড়ার অনুরোধ নিয়ে।
কিন্তু আবু হানিফা সেই জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতী জানালেন। ঠিক তার পরের দিন ইমাম আবু হানিফা একটা স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তিনি সেই মদ্যপায়ী ব্যক্তিকে জান্নাতের বাগানের মাঝে হাঁটতে দেখলেন এবং বলতে শুনলেন, ” আবু হানিফাকে বলে দাও, সকল প্রশংসা  আল্লাহর, এজন্য যে, জান্নাতের এখতিয়ার আবু হানিফার হাতে নেই।”
ঘুম ভাঙতেই ইমাম আবু হানিফা খুব দ্রুত সেই ব্যক্তির স্ত্রীর নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ” দয়া করে বলুন, মৃত্যুর আগে আপনার স্বামীর অবস্থা কিরূপ ছিল?” স্ত্রী উত্তরে বললেন, সে তো আপনি তাকে যেমন জানেন তেমন ই ছিলেন। তবে তার একটা বিশেষ আমল ছিল। তিনি প্রতি শুক্রবার এলাকার একটি ইয়াতিম খানায় খানা খাওয়াতেন এবং ইয়াতিমদের মাথায় হাত বুলাতেন এবং কেঁদে কেঁদে বলতেন, তোমরা তোমাদের এই চাচার জন্য দোয়া কর যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।
ইমাম আবু হানিফা বুঝলেন হয়তো সেই এতিমদের মধ্যে কোন একজন এতিমের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। ইমাম আবু হানিফা সেই লোকের জানাজা না পড়ানোর জন্য চরমভাবে আফসোস করলেন।
তাই আসুন ভাই ও বোনেরা, আমরা অন্য ভাই বা বোন দের কে ছোট করে না দেখি। তাদেরকে তাদের গোনাহের জন্য নসিহত করি কিন্তু অপমানিত না করি। কারণ আমরা সবাই গুনাগার। আমাদের গুনাহকে মহান আল্লাহতায়ালা ঢেকে রেখেছেন। আর আল্লাহ চাইলে সবার কাছে আমাদের গোপন গুনাহগুলোকে প্রকাশ করে দিতে পারেন।
আপনি আমি হয়তো অনেক বেশি নামাজ পড়ি, অনেক বেশি নফল রোজা রাখি, কিন্তু আমরা কি জানি যে কে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়?
নসিহত করুন কিন্তু নরম সুরে। নসিহত করার সময় অপমান করা যাবে না এবং কারো দোষ ও প্রকাশ করা যাবে না। কাওকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। কারণ মনে রাখতে হবে, দিন এবং হৃদয়, দুটোই হঠাৎ করে বদলে যায়। আজ আমি যা এবং আমার অন্তর যা, কাল তা না-ও থাকতে পারে।

শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন হয়তো আপনার শেয়ারে কেউ উপকৃত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close