আযান, আমাদের মুসলিমদের জন্য একটি ব্যতিক্রমি বিষয়। এই আযানের মাধ্যমে দৈনিক কমপক্ষে ৫ বার মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা হয়। আযানের উত্তর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ সুন্নত। আমাদের আশেপাশে অনেক মসজিদ থেকে প্রতিনিয়ত সুমধুর আযানের শব্দ আমরা শুনতে পাই। কিন্তু এর উত্তর দেয়ার মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব পাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করে থাকি। তাই এই অতি গুরুত্বপুর্ণ আমলের ফযীলত নিয়ে একটু আলোচনা করা হলো, যেন মুসলিমরা আযানের উত্তর দেয়ার আমলের ব্যাপারে উৎসাহী হয়।
আযানের ফযীলত সংক্রান্ত কিছু বাহাইকৃত হাদিস
নবী (সা:) বলেছেন,
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত আজানের জবাব দিবে, আজানের পর দরুদ ও দোআ পড়বে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার জীবনে পরিশুদ্ধ করবেন এবং রাসূল (সা:) তাকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
আবূ সায়ীধ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে।
[সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৪, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১১]
ইয়াহইয়া (র.) বলেছেন,
আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুআযযিন যখন “হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ” বলল, তখন তিনি (মু’আবিয়া (রা.)) “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ” বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী (সাঃ) কে আমরা এরুপ বলতে শুনেছি।
[সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৬, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১৩]
আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! মুআযযিনরা তো আমাদের উপর ফযীলত প্রাপ্ত হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান ছওয়াব পাব? তিনি বলেনঃ মুআযযিনরা যেরুপ বলে – তুমিও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর যখন আযান শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রুপ ছওয়ার প্রাপ্ত হবে।
[সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৪]
♦আযান ও আযানের জবাব শেষে সহীহ দোয়া সমূহঃ
১. আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে।
২. আযানের দোয়াঃ “আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ।
৩. মুয়াযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।
♦আযানের দো‘আয় বাড়তি/বিদআত বিষয় সমূহঃ
১. মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে।
২. বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে। যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায় না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।
৩. মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা,অতঃপর শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ,ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলার ব্যাপারে কোন হাদিস কোথায় খুজে পাওয়া যায় না।
♦আযানের অন্যান্য মাসায়েলঃ
১. আযানের উদ্দেশ্য হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোন মজুরী চাওয়া যাবে না। তবে বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ করা যাবে। কেননা নিয়মিত ইমাম ও মুওয়াযযিনের সম্মানজনক জীবিকার দায়িত্ব গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের উপরে অপরিহার্য কর্তব্য। [আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ]
২. আযান ওযূ অবস্থায় দেওয়া উচিত। তবে বে-ওযূ অবস্থায় দেওয়াও জায়েয আছে। আযানের জওয়াব বা অনুরূপ যেকোন তাসবীহ, তাহলীল ও দো‘আ সমূহ এমনকি নাপাক অবস্থায়ও পাঠ করা জায়েয আছে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।]
৩. এক্বামতের পরে দীর্ঘ বিরতি হ’লেও পুনরায় এক্বামত দিতে হবে না। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৯, ৯২ পৃঃ ;ছালাতুর রাসূল,তাখরীজ :আব্দুর রঊফ,১৯৮ পৃঃ।]
৪.ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের জন্য আযান আবশ্যিক নয়। কেবল এক্বামতই যথেষ্ট হবে। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৪, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬;মির‘আত ২/৩৮৭]
৫. আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে এলে কেবল এক্বামত দিয়েই জামা‘আত ও ছালাত আদায় করবে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ ‘আযান’ অধ্যায়,মাসআলা-১৮।]
৬. যিনি আযান দিবেন,তিনিই এক্বামত দিবেন। অন্যেও দিতে পারেন। অবশ্য মসজিদে নির্দিষ্ট মুওয়াযযিন থাকলে তার অনুমতি নিয়ে অন্যের আযান ও এক্বামত দেওয়া উচিত। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে যে কেউ আযান দিতে পারেন। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯০,৯২ পৃঃ;মাসআলা-১৩,২০।]