বিবাহিত জীবনের ধাপ সমূহ Leave a comment

১. সবচেয়ে আনন্দময় এবং মধুচন্দ্রিমাময় ধাপঃ

এটা হল “wow” ধাপ। মাত্র বিয়ে হয়েছে। জীবন মাত্র শুরু। অনেক কিছুই দেখা এবং বোঝা বাকি। এই নতুন করে এক মানুষকে আবিষ্কার করা আসলেই রোমাঞ্চকর। একই বিছানায় ঘুমানো, নিজেকে সুন্দর করে সাজানো, পরিপাটি থাকা, এক সাথে রান্না করা এবং খাওয়ানো, এক সাথে গোসল ইত্যাদি ইত্যাদি। বিয়ের শাড়ী কাপড়, গয়না গাটি পড়ে আত্নীস্বজনদের বাসায় যাওয়া এ সব কিছুই বলে দেয়, যে জীবন কখনই এমন সুন্দর ছিলনা। এ সব কিছুর পিছনে স্বামী স্ত্রীর মাঝে স্থাপিত শারীরিক সম্পর্ক একটা বিরাট ভুমিকা পালন করে। এই সময়কে অনেকে আবার  “honeymoon Period” বলে থাকেন। 

২.  অস্বস্তির শুরুর ধাপঃ

Honeymoon Period” শেষ হবার পরপরই এইধাপের শুরু। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মাঝে যে রোমাঞ্চ ছিল, তা অনেকেটাই স্তিমীত হয়ে এসেছে। উভয়েই উভয়ের  দুর্বলতা গুলো দেখতে শুরু করেছে। এবং এই দুর্বলতার ফলে যে ভুলগুলো হচ্ছে তা বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবং বারবার হবার কারণে তা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের স্নায়ু এবং অন্তরে প্রভাব বিস্তার করছে। বারবার স্নায়ুর ওপর এই দুর্বলতাগুলো এসে আঘাত করার ফলে এক পর্যায়ে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের কাছে পুরো ব্যাপারটাই উপদ্রব আকারে দেখা দেয়। যেমন স্বামী হয়তো জোরে জোরে নাক ডাকেন স্ত্রী হয়তো সারাদিন ঘুমান অথবা রান্নাঘরে খুব ধীরে ধীরে কাজ করেন স্বামী বেশি চিল্লাপাল্লা করেন স্ত্রী বেশি কথা বলেন স্বামী সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন এবং খালি খেলা আর খেলা স্ত্রী কোন কিছু বললে স্বামী তার কথা ঠিকমতো শুনেন না স্ত্রী বেশি বেশি ডিমান্ড করেন ইত্যাদি সমস্ত সমস্যা গুলো আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে ওঠে। স্বামী এবং স্ত্রী মনে মনে ভাবতে শুরু করেন কি সমস্যা কেন এমন হচ্ছে? এরপর আস্তে আস্তে তাদের মনের কোনায় প্রশ্ন জাগে, “এজন্যই কি বিয়ে করেছিলাম?? সবাই কি এমনই হয়??” 

৩। ক্রোধানল ধাপঃ 

এই ধাপে স্বামী স্ত্রীর একে অপরের ভুলগুলো বারংবার সামনে আসতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে সেগুলো স্নায়ু এবং উভয়ের মনের উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে। অবশেষে রাগের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আবার অনেকে থাকেন যারা introverted  স্বভাবের কারণে ক্ষোভ চেপে রাখেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ফুসতে থাকেন। এসময় কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। গোয়ার্তুমী, ঘাড় তেড়ামী ইত্যাদির মাধ্যমে প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বাভবের উপর অবিচল থাকে। এই ধাপেই স্বামী-স্ত্রী মনে মনে ভেবে থাকে, “এই মানুষটাকে বিয়ে করে কি ভুলই করলাম? নাহ্‌, জীবনে এত বড় ভুল করে ফেললাম?”

জ্বী না! ভাইয়েরা এবং বোনেরা। আপনারা কোন ভুল করেননি। বিবাহিত জীবনের একটা জটিল ধাপ পার করছেন মাত্র!!

৪। সমাধান প্রয়াসী ধাপঃ

ক্রোধানল ধাপ হচ্ছে বিয়ের সবচেয়ে কঠিন ধাপ। এই ধাপে অনেকেই তাদের সম্পর্ক টিকে রাখতে পারেনা। আর টিকে থাকলেও সম্পর্কে এমন স্থায়ী কোন দাগ বা ক্ষত সৃষ্টি হয় যা সারাজীবনেও ঠিক হবার নয়। যাইহোক, এই ধাপ অনেক জটিল। কিন্তু এই জটিল ধাপের পর শুরু হয় সমাধান প্রয়াসী ধাপ। এই ধাপে স্বামী স্ত্রী উভয়েই বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শুরু করে। মানুষের দুর্বল দিক থাকা স্বাভাবিক এটা তারা বুঝতে শুরু করে। রাগ এবং গোয়ার্তুমি করে যে এই দুর্বলতা দুর করা যায় না সেটাও বুঝতে পারে। সে তখন সমাধান চায়। সমাধানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ও হয়ে যায়। এমনকি সমাধানের লক্ষ্যে একে অপরের দুর্বলতাগুলো মেনে নিতে শুরু করে। সহজ কথায়, নিজেদেরকে adjust করতে শুরু করে। 

৫। মানিয়ে নেয়া ধাপঃ

যখন স্বামী স্ত্রী এই ধাপে আসে, তখন তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, প্রত্যেকের দুর্বলতা তার সত্তারই একটি অংশ। এটা তার ফিতরাত যা আসলে সহসাই বদলে ফেলা অসম্ভব। কাজেই তখন উভয়ে তাদের রাগ, হতাশাকে দুরে ঠেলে দেয়। ঝগড়া, বিবাদ বাদ দিয়ে সহজভাবে মেনে নিতে পারে। একে অপরকে ভাল মন্দ সবকিছু নিয়েই ভালবাসতে শুরু করে।   

৬। স্থিরতার ধাপঃ 

এটা হল সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে দুজন দুজনার সমস্ত দোষ, দুর্বলতাকে একপাশে সরিয়ে একে অপরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতে শুরু করে। এজন্য কোন রকম যুক্তি বুদ্ধির আশ্রয় নেয় না। স্রেফ ভালবাসে। উপভোগ করে। অনেকদিন ধরে সংসার করার কারণে একজন আরেকজনের ভাললাগা, চাওয়া বুঝে ফেলে। মানসিক, শারীরিক এবং আত্নিকভাবে দুজন দুজনের সাথে reconnect  হয়। এটাই আসল ভালবাসা, এটাই জান্নাতি ভালবাসা। বিয়ের প্রথম প্রহরের ন্যায় আবারো হানিমুন পিরিয়ডের আবির্ভাব ঘটে। এ পর্যায়ে, দম্পতির সামনে যত চ্যালেঞ্জই আসুকনা কেন, দুজনে মিলে সাহস ও ভালবাসার সাথে মোকাবেলা করে।    
perfect marriage বলে আসলে কিছু নেই। এ ধরনের বিয়ে শুধু গল্প উপন্যাসেই পাওয়া যায়। বিবাহিত জীবনে সমস্যা আসবেই। কারণ প্রত্যেক সম্পর্ক বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। এটা ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে যে, সে এটাকে ভাঙ্গবে, নাকি গড়বে। 

দেখা গেছে যে পরিবার আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সবার আগে রাখে, সে পরিবারে শান্তি বিরাজ করে। 
এরপর ও যদি আনার মনে হয় যে আপনি খুব খারাপ সময় দিয়ে যাচ্ছেন, বিয়ে করে শান্তি পাচ্ছেন না; তাহলে একটু সবর করুন। ইনশাল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ে করে আপনি ভুল করেন নি।
শুধু প্রয়োজন একটু বিজ্ঞতা। তাহলে যুনিয়াতে বসেই জান্নাতি সুখ পাবেন ইশাল্লাহ।
লিখেছেন—-দিলায়ারা ইয়ারখাম  

লেখা্টি পড়ে নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!!! 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close