মুক্তমনা বনাম অন্ধবিশ্বাসী Leave a comment


মায়ের গর্ভে দুটি যমজ বাচ্চা। ইতোমধ্যে ৭ মাস হয়ে গেছে।  দুজনেই এখন গর্ভের জগতে এক একজন পরিণত  ব্যক্তিত্ত্ব।  হঠাত দুজনের মধ্যে একজন আরেকজনকে জিজ্জেস করল, 
“গর্ভকালীন সময়ের পরে, প্রসবপরবর্তী জীবন সম্পর্কে তুমি কি ভাবো? আমাদের কি হবে? আদৌ কি কিছু হবে?” অপরজন বলল,
“অবশ্যই! এখান থেকে অবশ্যই আমরা আরেক নতুন জগতে পদার্পণ করব। এখানে বসে আমরা হয়তবা সেই জগতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্রহ করছি।”
“নির্বোধ তুমি!” প্রথমজন উত্তর দিল। “এরপর আমাদের আর কোন জীবন নেই, কোন জগত নেই। আমরা এখানেই জন্মেছি, এখানেই শেষ হয়ে যাবো। এই আমি আবার অন্য জগতে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করব? অসম্ভব!!”
দ্বিতীয় বাচ্চা উত্তর দিল,
“এরপর আমরা যে অন্য জগতে যাবো, তা নিশ্চিত। সেই জগত সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানিনা, তবে আমার ধারণা, এখন আমরা যে আলো পাচ্ছি, তাঁর থেকেও অনেক অনে—ক বেশী আলো থাকবে সেখানে।আমরা এখন হাঁটতে পারিনা, কিন্তু তখন হয়ত আমরা এই দুপায়ে জগতময় হেঁটে বেড়াবো। হয়তো মুখ দিয়ে খাবো। এরকম আরো অনেক কিছুই করতে পারবো, যা এখন পারিনা।”
প্রথম বাচ্চা বললো, “তুমি কি পাগল হয়েছ? এই দুটো পা যেখানে ঠিকমত নাড়াতেই পারিনা, সেখানে এই পা দিয়ে হেঁটে বেড়াবো? Absurd! আর মুখ দিয়ে খাওয়া? হেহ্‌, স্রেফ আকাশ কুশুম ভাবনা। যেখানে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, নাড়ি দিয়ে আমাদের পেটে খাবার জোটে, পুষ্টি জোটে। তুমি যুক্তিতে আসো। দেখ! এই নাড়ি কত ছোট। এই ছোট নাড়ি দিয়ে তুমি কতদূরই বা যেতে পারবে? কাজেই, যৌক্তিক চিন্তা করলে, আমাদের প্রসব ও হবেনা এবং নতুন কোন জগত ও হবেনা।”
দ্বিতীয়জন এবার একটু জোর দিয়েই বলল, “যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি, আমি যা বলেছি তা সবই হবে। হয়তোবা তখন আমাদের খাওয়ার জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা থাকবে, নাড়ী দিয়ে খেতে হবেনা।”
প্রথমজন বলল, “আহাম্মক! এরকম কিছুই হবেনা। আর যদি এরকম কিছু থাকতো তাহলে সেটা কেন আমরা দেখতে পারিনা, কেনইবা ওই জগত থেকে কেউ আমাদের কাছে ফিরে এসে দেখা দেয়না, কথা বলেনা।কাজেই প্রসবের সাথে সাথেই আমরা শেষ হয়ে যাবো। আমরা কোন নতুন জীবন বা জগত পাবোনা। প্রসবের পর শুধুই অসীম অন্ধকার এবং নীরবতা। আমরা শূণ্যতায় মিলিয়ে যাবো।”
 “যাই হোক, এ বিষয় নিয়ে আমি বিতর্কে জড়াতে চাইনা।তবে, আমি নিশ্চিত যে, প্রসবের পর আমরা আমাদের মায়ের সাক্ষাৎ পাবো। তিনি আমাদের যত্ন নিবেন, আদর করবেন, লালন পালন করবেন।” বলল দ্বিতীয়জন।
প্রথম বাচ্চা এবার তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল, “মা! তুমি মাকে বিশ্বাস কর? তুমি সত্যিই হাসালে। যদি মা সত্যিই থেকে থাকেন, তাহলে কোথায় তিনি? তাঁকে কেন আমরা দেখতে পাইনা।”
দ্বিতীয়জন বলল, “মা আমাদের চারপাশেই আছেন। তিনি আমাদের ঘিরে রেখেছেন। আমরা তারই। আমরা আমাদের মায়ের মাঝেই বেঁচে আছি। আমাদের মা না থাকলে আমরাও থাকতাম না।”
প্রথম বাচ্চা বলল, “ঠিক আছে। তুমি তোমার অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে থাকো। কিন্তু আমি মুক্তমনা।আমি যুক্তিতে বিশ্বাস করি। যুক্তিতে বলে, যেহেতু আমি মাকে দেখতে পাইনা, সেহেতু মা বলে কিছু নেই, ভবিষ্যতেও থাকবেনা।”
একথার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বাচ্চা বলল, “তুমি মাকে দেখতে না পারলেও, তাঁর অস্তিত্ত্ব অনুভব করতে পারবে, তাঁর নিদর্শন দেখতে পাবে। যদি তুমি কখনো মন দিয়ে দেখ আর শুনো, তাহলেই তাঁর অস্তিত্ত্ব অনুভব করবে, তাঁর মায়াভরা কন্ঠ শুনতে পাবে।”
                                                                                         ——সংগৃহীত 
শেয়ার করতে ভুলবেন না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close